এনিম্যাল হাজবেন্ড্রিতে অনার্সের সময়ই পোল্ট্রি সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে আমরা ব্রয়লার মুরগি তৈরির ব্রিডিং প্রিন্সিপাল পড়েছি। এনিম্যাল ব্রিডিং এন্ড জেনেটিক্সে মাস্টার্স করার সময়ও আমরা পোল্ট্রি ব্রিডিং পার্টে ব্রয়লার স্ট্রেইন তৈরির প্রিন্সিপল, স্টেপগুলো পড়েছি কিন্তু ইতিহাস কখনোই জানা হয়নি।
ব্রয়লার নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচারের পর থেকেই আমি ব্যাপারটা নিয়ে জানার জন্য বিভিন্ন বইপত্র ঘাটাঘাটি শুরু করি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই লেখা। লেখাটি অনেক বড় তাই অল্প অল্প করে দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে সবার পড়ার ধৈর্য্য থাকে।
১ম পর্বঃ এন্টিবায়োটিক ও মুরগির ইতিহাস
আজকে ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিস্টান ধর্মের ক্রিসমাস বা বড়দিন। ১৯৪৮ সালের এমনই এক ক্রিসমাসের দিনে নিউইয়র্ক স্টেটের ম্যানহাটনের অদুরে পার্ল রিভারে অবস্থিত ৫০০ একর জায়গা নিয়ে লেডেরল ল্যাবোরেটরিসের পোল্ট্রি বিল্ডিং এ গবেষক থমাস জুকস অবিশ্বাস্য একটা বিষয় পর্যবেক্ষন করলেন । জুকস তখনো ভাবেনি যে পুরো বিশ্বটাকে পরিবর্তন করে দিতে চলছেন উনি।
লেডেরল ল্যাবোরেটরিস কোন কৃষি বিষয়ক কোম্পানি ছিলো না, এটি ছিলো ফার্মাসিটিউক্যাল কোম্পানি যারা এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন বানানোর প্রথম দিককার একটি কোম্পানি । অন্যদিকে থমাস জুকস কৃষি কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করে পোল্ট্রি নিয়ে কাজের সুযোগ খুজছিলেন । ১৯৪২ সালে লেডেরল ল্যাবোরেটরিস তাকে পোল্টি নিউট্রিশন নিয়ে কাজের অফার দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন ।
থমাস জুকস লেডেরলে জয়েনের ১৪ বছর আগে স্কটিশ গবেষক আলেক্সেন্ডার ফ্লেমিং ছত্রাক থেকে নিঃসৃত একটা কেমিক্যাল আবিষ্কার করেন যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৯ সালে ফ্লেমিং এর আবিষ্কার থেকে ব্রিটিশ গবেষক হাওয়ার্ড ফ্লোরে এবং আর্নেস্ট চেইন সর্বপ্রথম পেনিসিলিন ড্রাগস আবিষ্কার করতে সক্ষম হন । এই পেনিসিলিন ছত্রাক, ইনফেকশনে আক্রান্ত ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে দেখা যায়, ইঁদুরের ক্ষতি না হলেও ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাচ্ছে । ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে নাৎসিদের ভয়ে ফ্লোরে এবং চেইন ইংল্যান্ড থেকে পেনিসিলিন নিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন ।
আমেরিকায় পেনিসিলিনের সাফল্যের পর একে একে স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরামফেনিকল আবিষ্কৃত হলে ফাইজার সহ বিভিন্ন কোম্পানি সারা বিশ্বে তন্ন তন্ন করে নতুন নতুন ছত্রাক খুঁজা শুরু করে । কারণ যুদ্ধের আহতদের সেবার জন্য প্রচুর এন্টিবায়োটিক দরকার পড়ছিলো।
এই অবস্থায় ১৯৪৮ সালে লেডেরল কোম্পানি ‘স্ট্রেপটোমাইসিন অরিওফাসিয়েনস” নামে একটি এন্টিবায়োটিক প্যাটেন্ট করার আবেদন করে। যেহেতু এন্টিবায়োটিক সোনার মত দামি ছিলো তখন তাই এই এন্টিবায়োটিকের নাম করা হয় “Aureomycin” , Aureo অর্থ হচ্ছে সোনা। পরবর্তীতে এটি chlortetracycline নামে পরিচিত হয় যা ট্রেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের প্রথম এন্টিবায়োটিক।
থমাস জুকাসের কাছে ফিরে আসি, এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে তার সংশ্লিষ্টতা ছিলো না, বরং তাকে নিয়োগ দেয়া হয় নিউট্রিশন ডিপার্টমেন্টে। কৃত্রিম একটা ফলিক এসিড তৈরির জন্য দ্বায়িত্ব দেয়া হয় তাকে, যেটা জন্মগত ডিফেক্ট রোধ করতে ব্যবহৃত হবে। জিনিয়াস জুকাস Methotrexate নামে ক্যান্সার কেমোথেরাপি ড্রাগস আবিষ্কার করে যেটা ফ্যালোপিয়ান টিউবে বাচ্চার এবরশন করার জন্যও ব্যবহৃত হয় ।
জুকাস কাজ করছিলো আবদ্ধ জায়গায় মুরগিকে কি খাইয়ে বড় করা যায়। তখন পর্যন্ত আমেরিকার মানুষজন মুরগি ছেড়েই পালতো, আলাদাভাবে রেশনের কোন ব্যবস্থা ছিলোনা। জুকাসের ফোকাস ছিলো মুরগির ওজন নিয়ে।
ক্রিসমাসের দিনে তার সামনে ছিলো বেশ কতগুলো ৩ দিনের মুরগির বাচ্চা । এদেরকে ৩ প্রকার খাদ্য সরবরাহ করেছে সে। সবগুলোর ওজন মাপার পর ৩ প্রকার রেশনের মূল্যায়ন করবে সে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির জন্য আসলেই সবচেয়ে খুশির ক্রিসমাস দিন ছিলো সেটি ।
এ.এফ.এম .ফয়জুল ইসলাম
বিসিএস ( লাইভস্টক)
বি.এসসি. ইন এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি, বাকৃবি
এম.এস. ইন এনিম্যাল ব্রিডিং এন্ড জেনেটিক্স, বাকৃবি
পোল্ট্রি এন্ড ডেইরি কনসালটেন্ট